১ - প্রোগ্রামিং কী?


কম্পিউটার একটি আশ্চর্য যন্ত্র যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অনেক হিসেব-নিকেশ করতে পারে। তার ওপর প্রচুর পরিমাণ তথ্যও ধারণ করতে পারে, তার স্থায়ী ও অস্থায়ী মেমোরিতে। তো এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ তৈরি করছে হরেক রকমের সফটওয়্যার। সেই সফটওয়্যার হতে পারে একটি সাধারণ ক্যালকুলেটর, কিংবা চালকবিহীন গাড়ি চালানোর সফটওয়্যার, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি ব্যবস্থা, কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠা পরিচালনার জন্য তৈরি সফটওয়্যার। কত কাজে যে মানুষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে, সেটি বলে শেষ করা যাবে না। তো সফটওয়্যার ব্যবহারের সুবিধা কী? যেসব কাজে প্রচুর পরিমাণ তথ্য প্রক্রিয়া (process) ও সংরক্ষণ করার কাজ করতে হয়, যা অনেক সময় সাপেক্ষ, সেখানেই সফটওয়্যার ব্যবহার করে অত্যন্ত দ্রুত ও নির্ভুলভাবে কাজটি করা যায়। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের কথাই ধরা যাক। সেখানে ১০-১৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর অনেকগুলো বিষয়ের পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়া করতে হয়, তারপর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে হয়। সফটওয়্যারের মাধ্যমে কাজটি করার ফলে হাজার হাজার ঘণ্টার শ্রম বেঁচে যায়।

মানুষ যে এত সফটওয়্যার তৈরি করছে, মানুষ নিজে কী করবে? উত্তরে সবাই বলেন যে, মানুষ বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করবে, যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (ইংরেজিতে বলে Artificial Intelligence) দিয়ে কম্পিউটারও একটু একটু করে সৃজনশীল হওয়া আরম্ভ করেছে। কিন্তু যত বেশি সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে, রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, তত বেশি প্রোগ্রামারের দরকার হবে – কেবল বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে। বিশ্বব্যাপী ভালো প্রোগ্রামারদের রয়েছে অনেক চাহিদা। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, প্রোগ্রামার হওয়া তেমন কোনো কঠিন কাজ না হলেও ভালো প্রোগ্রামার হওয়া অনেক কঠিন কাজ। এর জন্য বছরের পর বছর ধরে লেখাপড়া ও চর্চা করতে হয়।



২ - প্রোগ্রামাররা কী করে?


প্রোগ্রামাররা সফটওয়্যার তৈরি করে, যেখানে এক বা একাধিক প্রোগ্রাম থাকে। প্রোগ্রামগুলোতে থাকে সোর্স কোড, যা কম্পিউটার বুঝতে পারে, এমন কোনো ভাষায় লিখতে হয়। সোর্স কোডে একটি নির্দিষ্ট ভাষায় কম্পিউটারের জন্য কিছু নির্দেশ দেওয়া থাকে, যা আরেকটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটার বুঝে নেয় এবং সেই অনুসারে কাজ করে।

সবাই তো সফটওয়্যার তৈরি করবে না। তাহলে সবার কি প্রোগ্রামিং শেখা উচিত? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ, এখন সবারই প্রোগ্রামিং শেখা উচিত। প্রোগ্রামিং চর্চা মানুষের মস্তিষ্ককে শানিত করে, যুক্তি দিয়ে কোনো সমস্যা বা তথ্য বিশ্লেষণের অভ্যাস তৈরি করে। এছাড়া উচ্চশিক্ষার বেশিরভাগ বিষয়েই নিজে প্রোগ্রামিং করার প্রয়োজন হয়, তাই আগে থেকে প্রোগ্রামিং জানা থাকা উচিত। আর অচিরেই কর্মক্ষেত্রেও নানান কাজে প্রোগ্রামিং করার প্রয়োজন হবে। তাই স্কুল-কলেজের সকল শিক্ষার্থীরই প্রোগ্রামিং শেখা প্রয়োজন।


৩ - পাইথন কী?


বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার মধ্যে পাইথন হচ্ছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ভাষা। পাইথন ব্যবহার করে ওয়েব, মোবাইল, ডেস্কটপ ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করা যায়। মেশিন লার্নিং (Machine Learning) ও ডেটা সায়েন্স (Data Science) ক্ষেত্রেও পাইথন অনেক জনপ্রিয়। আর প্রোগ্রামিং শেখাকে সহজতর করার জন্যও পাইথন ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক জায়গায়। পাইথন ভাষা তৈরি করেন গুইডো ভন রুযাম (Guido van Rossum)। ১৯৮৯ সালে পাইথন তৈরির কাজ শুরু হয়, এখনও পাইথন নিয়মিত হালনাগাদ হচ্ছে এবং এর বিভিন্ন সংস্করণ (ভার্সন) প্রকাশিত হচ্ছে। প্রোগ্রামিং শেখার জন্য যেমন পাইথন গুরুত্বপূর্ণ, একাডেমিক কাজে যেমন পাইথন ব্যবহার করা হয়, তেমনি সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতেও পাইথনের অনেক ব্যবহার রয়েছে। এই মুহুর্তে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশের বাইরে ভালো পাইথন প্রোগ্রামারের অনেক চাহিদা। তবে লক্ষ করতে হবে, শুধু পাইথন প্রোগ্রামার নয়, বরং ভালো পাইথন প্রোগ্রামার।


তাই এসো নিজেকে ভালো প্রোগ্রামার হিসেবে প্রস্তুত করি বেকার মুক্ত দেশ গড়ি।।।